“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”
বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি) সংবিধান ২০২৪
প্রথম অংশ: প্রস্তাবনা
আমরা, বাংলাদেশের সংস্কারমুখী, গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল নাগরিকগণ, যারা সকল স্তরের দুর্নীতি ও বৈষম্য দূর করে সমাজে ন্যায়বিচার, সমতা ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আজ একত্রিত হয়ে “বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি)” প্রতিষ্ঠা করেছি। এই সংবিধানের মাধ্যমে দলীয় কাঠামো, নিয়ম–নীতি, সদস্যপদ, নেতৃত্ব নির্বাচন এবং দলের লক্ষ্য–উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হলো। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি সুশাসিত, সচ্ছল, ও উদ্ভাবনী রাষ্ট্রে পরিণত করা, যেখানে নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে এবং সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।
প্রথম অধ্যায়: নাম এবং উদ্দেশ্য
১.১ নাম ও পরিচিতি:
এই সংবিধানের অধীনে গঠিত দলটির নাম “বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি)”।
১.২ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য:
বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা, দুর্নীতি নির্মূল করা, এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধন।
দ্বিতীয় অধ্যায়: দলীয় কাঠামো এবং শাসনব্যবস্থা
১. বিআরপি নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ অফিসসমূহ নিয়ে গঠিত হবে:
ক. চেয়ারম্যান
খ. পার্টি প্রেসিডেন্ট
গ. পার্টি লিডার
ঘ. নির্বাহী কমিটি
ঙ. সাধারণ পরিষদ
তৃতীয় অধ্যায়: চেয়ারম্যানের ভূমিকা
১. কৌশলগত দৃষ্টি এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য:
চেয়ারম্যান দলটির কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যগুলির রক্ষক হিসেবে কাজ করেন এবং নিশ্চিত করেন যে দলটি তার প্রতিষ্ঠিত নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
২. পরামর্শমূলক এবং আনুষ্ঠানিক ভূমিকা:
চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রধানত পরামর্শমূলক এবং আনুষ্ঠানিক। তিনি দলের নেতৃত্বকে পরামর্শ দেন এবং গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে দলকে প্রতিনিধিত্ব করেন, তবে দলের দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনায় সরাসরি অংশ নেন না।
৩. একতা এবং স্থিতিশীলতার প্রতীক:
চেয়ারম্যান দলের মধ্যে ঐক্য এবং স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে কাজ করেন, দলীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একত্রিত করে একটি সাধারণ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান।
৪. ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা:
চেয়ারম্যান পার্টি প্রেসিডেন্ট, পার্টি লিডার বা প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালীন দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এটি ক্ষমতার পৃথকীকরণ নিশ্চিত করে।
৫. সংঘাত নিরসনে ভূমিকা:
চেয়ারম্যান দলীয় অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও সংঘাত নিরসনে মধ্যস্থতা করতে পারেন এবং দলের একতা বজায় রাখতে সাহায্য করেন।
৬. অ–নির্বাহী ক্ষমতা:
চেয়ারম্যানের ভূমিকা স্পষ্টভাবে অ–নির্বাহী। তিনি কৌশলগত পরামর্শ দিতে পারেন, তবে দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার কোনো সরাসরি ক্ষমতা নেই।
৭. নেতৃত্বের মেয়াদ এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া:
চেয়ারম্যান দলীয় সদস্যদের দ্বারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। মেয়াদ হবে ৫ বছর, এবং চেয়ারম্যান সর্বাধিক দুইটি পরপর মেয়াদ (১০ বছর) ধরে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। দুই মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর চেয়ারম্যান আর একই পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।
৮. নেতৃত্ব হস্তান্তরে দিকনির্দেশনা:
নেতৃত্ব পরিবর্তনের সময়, চেয়ারম্যান দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মসৃণ করতে পরামর্শ দেন এবং নেতৃত্ব প্রতিযোগিতায় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেন।
৯. প্রকাশ্য প্রতিনিধিত্ব এবং ঐতিহ্য:
চেয়ারম্যান দলের ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে প্রকাশ্য মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং দলের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যে অংশীদারদের সাথে যোগাযোগ করেন।
চতুর্থ অধ্যায়: পার্টি প্রেসিডেন্টের ভূমিকা
১. দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা:
পার্টি প্রেসিডেন্ট বিআরপি এর দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করেন, নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন কমিটির কার্যক্রম সমন্বয় করেন।
২. দলীয় নীতি বাস্তবায়ন:
পার্টি প্রেসিডেন্ট দলের কৌশল এবং নীতিমালাগুলি বাস্তবায়নের নেতৃত্ব দেন, যাতে দলীয় লক্ষ্যগুলির সাথে সামঞ্জস্য থাকে।
৩. প্রধান মুখপাত্র:
পার্টি প্রেসিডেন্ট বিআরপি এর প্রধান মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন, দলীয় অবস্থান প্রকাশ্যে এবং গণমাধ্যমে তুলে ধরেন।
৪. নেতৃত্ব এবং জবাবদিহিতা:
পার্টি প্রেসিডেন্ট দলের সামগ্রিক কার্যকারিতার জন্য দায়ী এবং দলের মধ্যে স্বচ্ছতা ও সততার সংস্কৃতি তৈরি করেন।
৫. নির্বাচন এবং মেয়াদ:
পার্টি প্রেসিডেন্ট দলীয় সদস্যদের দ্বারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হন। মেয়াদ হবে ৫ বছর, এবং প্রেসিডেন্ট সর্বাধিক দুইটি পরপর মেয়াদ (১০ বছর) ধরে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। দুই মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট আর একই পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।
৬. নির্বাহী কমিটির সাথে সমন্বয়:
পার্টি প্রেসিডেন্ট নির্বাহী কমিটির সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করেন, দলীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
৭. নেতৃত্বের বিকাশ এবং উত্তরাধিকারের পরিকল্পনা:
পার্টি প্রেসিডেন্ট ভবিষ্যত নেতাদের চিহ্নিত এবং প্রশিক্ষিত করেন, যাতে দলটি দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল থাকে।
৮. অংশীদারদের সাথে সম্পৃক্ততা:
পার্টি প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক সত্তা, সিভিল সোসাইটি এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে আলোচনায় দলকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
পঞ্চম অধ্যায়: পার্টি লিডারের ভূমিকা
১. আইনসভা এবং সংসদীয় নেতৃত্ব:
পার্টি লিডার সংসদীয় কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন এবং আইনসভায় দলের স্বার্থ রক্ষা করেন।
২. সংসদীয় কৌশল এবং সমন্বয়:
পার্টি লিডার সংসদীয় কৌশল তৈরি এবং দলের লক্ষ্য অর্জনে সদস্যদের সমন্বয় করেন।
৩. দলীয় নীতির পক্ষে আইনসভায় সমর্থন:
পার্টি লিডার দলীয় এজেন্ডা আইনসভায় প্রচার করেন এবং জাতীয় প্রশাসনে এটি প্রতিফলিত করার জন্য কাজ করেন।
৪. প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী:
পার্টি লিডার অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনে বিআরপি এর প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী হবেন। এটি নিশ্চিত করে যে পার্টি লিডার দলীয় লক্ষ্য এবং প্রশাসনের জন্য স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করবেন এবং জনসমর্থন অর্জনে মনোযোগী থাকবেন।
৫. নির্বাচন এবং মেয়াদ:
পার্টি লিডার দলীয় সদস্যদের দ্বারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হন। মেয়াদ হবে ৫ বছর, এবং লিডার সর্বাধিক দুইটি পরপর মেয়াদ (১০ বছর) ধরে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। দুই মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর লিডার আর একই পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।
৬. দল এবং সরকারের মধ্যে সংযোগ:
দল সরকারে থাকলে, পার্টি লিডার নির্বাহী শাখা এবং দলীয় সংগঠনের মধ্যে সংযোগকারী হিসেবে কাজ করেন।
৭. সংসদীয় কার্যক্রমে কৌশলগত যোগাযোগ:
পার্টি লিডার আইনসভায় দলীয় অবস্থান উপস্থাপন করেন, আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এবং দলের উদ্যোগে সমর্থন জোগাড় করেন।
৮. সংসদ সদস্যদের দিকনির্দেশনা:
পার্টি লিডার সংসদীয় কার্যক্রমে দলের অন্যান্য সদস্যদের কৌশলগত দিকনির্দেশনা এবং সহায়তা প্রদান করেন।
ষষ্ঠ অধ্যায়: ক্ষমতার পৃথকীকরণ
১. গণতান্ত্রিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করতে, একজন ব্যক্তি চেয়ারম্যান, পার্টি প্রেসিডেন্ট এবং পার্টি লিডারের পদ একসাথে অধিকার করতে পারবেন না।
২. চেয়ারম্যানের ভূমিকা সরকার এবং নির্বাহী ক্ষমতা থেকে পৃথক থাকবে।
সপ্তম অধ্যায়: নেতৃত্ব এবং সরকারি ভূমিকা
১. চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কোনো সরকারি পদে নির্বাচিত বা নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন না।
২. যদি এমন কোনো পদে মনোনীত হন, তবে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
অষ্টম অধ্যায়: সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কর্তৃত্ব
১. নির্বাহী কমিটির সমর্থনে পার্টি প্রেসিডেন্ট দলীয় কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দায়ী।
২. চেয়ারম্যান কৌশলগত পরামর্শ প্রদান করতে পারেন, তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষমতা তার নেই।
নবম অধ্যায়: সংশোধনী
১. এই সংবিধানে সংশোধনী আনতে সাধারণ পরিষদের দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট প্রয়োজন।